Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

বিজ্ঞানীরা মহাকাশের চেয়ে সমুদ্র নিয়ে গবেষণা কম করে কেন?


 বিজ্ঞানীরা মহাকাশের চেয়ে সমুদ্র নিয়ে গবেষণা কম করে কেন?

পৃথিবীর ৩ ভাগ জল, ১ ভাগ স্থল। ছোটবেলা থেকেই এ গুরুবাক্য আমাদের মুখে মুখে। কিন্তু গুরুবাক্যটিই বেশিরভাগ সময়ই অবহেলিত হয়ে এসেছে। নভোবিজ্ঞান সবসময় সমুদ্রবিজ্ঞানের চেয়ে এগিয়ে ছিলো। এখনও আছে।

বিজ্ঞানের জয়যুগে যখন শুনতে পাই, মাত্র ১% সমুদ্রবিজ্ঞান আমাদের কব্জায় আছে। তখন নিজের অজান্তেই অবাক হই। কি করলো এই বিজ্ঞান, কিইবা ছিলো তাদের অসাড়তা?


মানুষের কল্পনার সূত্রপাত কিন্তু আকাশ থেকেই শুরু হয়েছে ৷ মানুষ কল্পনা করতো চাঁদকে দেখে,সূর্যকে দেখে। সমুদ্রে তেমনটা পাবার সম্ভাবনা নেই।

নভোবিজ্ঞানের উপাদানগুলো মানুষ যত দেখেছে ততই আকৃষ্ট হয়েছে। তাই এমন উন্মক্ততায় এর পিছনে ছুটে চলা। কিন্তু সমুদ্রের বিশালতা দেখেই মুগ্ধ হয়েছে মানুষ।

একে নিয়ে ঘাটাঘাটি করার সাহস খুব কম লোকেই দেখিয়েছিলেন। আবহাওয়াভেদে সমুদ্রে দৃষ্টিসীমা যেখানে সর্বোচ্চ ২০০ ফুট, সেখানে মানুষের নিবেদন পাওয়াটা যেন তারপক্ষে একটু কঠিনই। তাই সমুদ্র সবসময় মানুষের কাছে একটা অজানা-রহস্যকর ব্যাপার হিসেবেই থেকে গেছে।

প্রযুক্তি ও বড় অন্তরায় ছিলো। গ্যালিলিও সাহেব যেখানে একটা থিওরি আবিষ্কার করে, দুটো কাচ পাশাপাশি বসিয়ে শুরু করে দিলেন নভোবিজ্ঞানে গবেষণা বা তার সমসাময়িক আরো অনেক বিজ্ঞানী-গবেষকরা জোর্ত্যিবিজ্ঞানে যেমন অবদান রাখতে পেরেছিলেন, সমুদ্রবিজ্ঞানে কিন্তু তেমনটা ছিলো না।


সমুদ্রবিজ্ঞানের গবেষণায় সবচেয়ে জোরালো প্রমান পাওয়া যায় মধ্যযুগে। ১৪০০-১৫০০ শতাব্দীতে যখন বিখ্যাত নাবিক কলাম্বাস কিংবা ভাস্কো-গা-গামা'র মত মানুষেরা সমুদ্রবিজ্ঞান চর্চা শুরু করেন। 

প্রাচীন মানুষেরা মনে করতো পৃথিবী বুঝি সমতল। যদিও তাদের ধারনাটিকে সেসময় খুব জোরেসোরে ভুল বলা চলতো না। কারন তখন, বিস্তৃত সমুদ্রের তীরে বসে বিশাল সাগরগুলোকে দেখে কল্পনাও করা যেতো না যে পৃথিবী গোলাকার আকৃতির। কলাম্বাসের মত কিছু আবিষ্কারকদের প্রয়াসে মধ্যযুগে এ ভুল ধারনাটির অবসান হয়।

আরো অনেক প্রমান পাওয়া যায় ভাইকিংসদের থেকে। বর্তমান সমুদ্রবিজ্ঞানের পুর্নাঙ্গ ম্যাপটি তৈরিতে তাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। কিন্তু মধ্যযুগের সমুদ্রগবেষনা ঐ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো।


সমুদ্রবিজ্ঞান বিশাল একটা ব্যাপার। তার সমন্ধে জ্ঞান প্রাচূর্যতা শুধু ভৌগলিকেই পরিসীমিত নয়।সমুদ্রবিজ্ঞানের আধুনিক এবং মৌলিক গবেষণাটা শুরু হয় মাত্র ১৩০ বছর আগে,প্রযুক্তির রেনেসার সময়টাতে।

তখন আমেরিকা, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার মত অনেক দেশের নেভিগেটর ও বৈজ্ঞানিকরা তোড়জোড়ে সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণায় লেগে পড়েন। এ ব্যাপারে ব্রিটেনের জাহাজ HMS challenger বড় ভূমিকা রাখে।

এ জাহাজটির লম্বা সময়ের অভিযানে সমুদ্রবিজ্ঞানের এমন সব তথ্য আনতে সক্ষম হয়, যা সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণায় মোড় ঘুড়িয়ে দেয়।

আর নিত্যনতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার ও বৈজ্ঞানিকদের কাজে গতি এনে দেয়। সেই সাথে সমুদ্রবিজ্ঞান, আধুনিকযুগের গবেষণা নতুন ক্ষেত্র হিসেবে পরিগনিত হয়। পরবর্তীতে এই গবেষণাকে আরো বিস্তৃত করার জন্য প্রধান ৪ টি ভাগে ভাগ করা হয়।

ফিজিক্যাল ওশানোগ্রাফি

কেমিক্যাল ওশানোগ্রাফি

বায়োজিক্যাল ওশানোগ্রাফি

জিওলজিকাল ওশানোগ্রাফি

তবে আজকের সমুদ্রবিজ্ঞানের যতসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত আবিষ্কার হয়েছে,তার প্রায় অধিকাংশই মাত্র ৬০-৭০ বছর আগের পাওয়া। আরো ভালোভাবে বলতে গেলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। তখন যুদ্ধরত প্রতিটি রাষ্ট্রের জন্য নেভি খুবই প্রয়োজনীয় শক্তি হিসেবে দেখা দেয়।

এসব নৌবাহিনীদেরকে সমুদ্রে ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য সমুদ্রবিজ্ঞান সম্পর্কে বিশদ জানা জরুরি হয়ে পড়ে। এর আবেদন আরো বেগবান হয় যখন সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার শুরু হয়। এর মাধ্যমে গভীরসমুদ্রের ক্রিয়া বিশ্লেষণ করা বৈজ্ঞানিকদের অব্যশাম্ভী হয়ে পড়ে। ফলাফলে বেড়িয়ে আসে সমুদ্র নিয়ে সব না জানা তথ্য।


আধুনিকযুগে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর জন্য সমুদ্রবিজ্ঞানে জানাটা জরুরি হয়ে পড়ছে। Blue economy একবিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক বিষয়ে রূপ নিয়েছে।

সমুদ্রকে অর্থনৈতিকভাবে কাজে লাগানোর চিন্তাভাবনা থেকেই Blue economy'র ধারণার আবিষ্কার। জলবায়ু সমস্যার আদি-আন্ত্য নির্নয়েও সমুদ্রবিজ্ঞান যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে নিশ্চিতভাবে রেখে চলবে।

আজকে NASA 'র মতো বড় বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো সমুদ্রবিজ্ঞান নিয়ে বিশাল বিশাল প্রজেক্ট, এক্সপিডেশন উন্মোচন করছে। তাই বলা যায়, ভবিষ্যতে এই ক্ষেত্রটি আরো বিস্তৃত লাভ করবে।

 

এটা ঠিক যে, নভোবিজ্ঞানের তুলনায় সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণার গতি বরাবরই কম ছিলো। সময় পাল্টেছে, পাল্টেছে মানুষের মন-মানসিকতা। যে সমুদ্রকে তারা ভয়,রহস্যের চোখে দেখতো, আজ সে রহস্য উন্মোচনে তারা সচেষ্ট হচ্ছে।

নিত্যনতুন আবিষ্কার ও মানুষকে আজ সমুদ্র নিয়ে আবিষ্কারে আগ্রহী করে তুলছে। ব্যক্তিগতভাবে এই বিশাল ক্ষেত্রটির অংশ হতে পেরে আমার সত্যিই ভালো লাগে।

 

আরও দেখুনঃ

 মোবাইলে ভিপিএন ব্যবহার করলে কি নেট দ্রুত হয়ে যায়?     কিছু দুর্দান্ত কম্পিউটার হ্যাকিং যা জানা প্রয়োজন?


ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য। যদি লেখাটি আপনার ভালো লাগে এবং উপকার পান তবে আপনার মতামত কমেন্টে জানান।

 আর যদি এই আর্টিকেল এ কোন ভুল 😒 থাকে বা কোনো মতামত 🤨 দিতে চান  তাহলে Comment Section বা Contact Us এ গিয়ে অভিযোগ বা যোগাযোগ  করুন 😊



Post a Comment

0 Comments